জন্ম নিবন্ধন আবেদন বা জন্ম নিবন্ধন কার্ড যাই বলেন দুটিই আমাদের জন্য জরুরী। কারণ বাংলাদেশর নাগরিক হিসাবে আমাদের প্রথম ডুকোমেন্ট হলো এই কাগজ। জন্ম নিবন্ধন দিয়েই পরবর্তীতে আমাদের বাকি ডকুমেন্ট গুলো তৈরী করা হয়। আর এই ডকুমেন্ট ছাড়া অন্যান্য ডকুমেন্ট তৈরী করতে পারবেন না। তাই এই কাগজটি আমাদের সংরক্ষনে থাকা দরকার। কি ভাবে এই কাগজটি পাবেন আজ আমি সে বিষয়ে জানাবো। আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
নিবন্ধন কি
নিবন্ধন হলো কোনো কিছু তালিকাভূক্ত করা। মানে আপনার যে কোনো ডকুমেন্ট নতিভুক্ত করাকে নিবন্ধন করা। যদি উদাহরণ দিয়ে বলি তবে এভাবে বলি, ক নামে একজন ব্যাক্তি জন্মগ্রহণ করলো সেটা গ্রামের প্রায় মানুষ জানে । কিন্তু এই ব্যাক্তিকে সরকারে হিসাবে তুলতে হবে। মানে এই ক ব্যক্তিকে সরকারের খাতায় নিবন্ধন করতে হবে।
কি কি লাগবে জন্ম নিবনন্ধন কার্ড তৈরী করতে
যেহেতু নিবন্ধিত ব্যক্তি নতুন জনগন। মানে তিনি এই প্রথম নিজের নাম সরকারি খাতায় উঠাবেন সেহেতু তেমন কিছু লাগবেনা। কারণ আপনার কাছে ডকমেন্ট হিসাবে কেবল ঠিকার কার্ডটিই আছে। সুতরাং শুধুমাত্র টিকার কার্ড দিয়েই আপনি জন্ম নিবনন্ধন কার্ড তৈর করতে পারবেন। তবে সাথে আপনার পিতা মাতার ভোটার আইডি কার্ড বা জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট সাথে নিতে হবে।
কিভাবে জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করবো
যদি আপনি জন্ম নিবন্ধন কার্ড সংগ্রহ করতে চান তবে প্রথমেই আপানাকে অনলাইনে আবেদ করতে হবে। যদি আপনি না পারেন তবে ইউনিয়ন ডিডিটাল কেন্দ্রে গিয়ে আবেদন করিয়ে নিতে পারেন। অথবা আমাদের এই আর্টিকেল ভালো করে পড়ুন, তবে আপনার হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে বা আপনার কম্পিউটারে আপনি নিজেই আবেদন করে নিতে পারবেন।
কিভাবে আবেদন করবো
আবেদন প্রক্রিয়া অন্যান্য আবেদনের মতই। তবে লিংক আর সাইট ভিন্ন। হতাশ হওয়ার কারণ নেই আমি সেই ঠিকানা দিয়ে দেবো। তবে আবেদনে যা লাগবে সেই ডকুমেন্ট গুলো সাথে নিয়ে বসতে হবে। আর খুব সতর্কতার সহিত প্রতিটি ধাপ অতিক্রিম করবেন। কারন আপনি আবেদনে আপনার তথ্য যে ভাবে দেবেন ঠিক তেমনি ভাবে আপনার কার্ড তৈরী হবে।
যা যা লাগবে আবেদন করতে
০ থেকে ৪৫ দিন বয়সের শিশুদের জন্য ও যে কোনো বয়সের নাগরিকের জন্য এই ডকুমেন্ট গুলো লাগবে
- প্রথমেই লাগবে আপনার টিকাদানের কার্ড অথবা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র।
- বাসা বাড়ির টেক্স টোকেন বা কর পরিশোধের রশিদ
- অভিভাবকের সচল মোবাইল নাম্বার
- পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন কার্ড ( অপশনাল)
- পিতা মাতার ভোটার আইডি কার্ড ও লাগবে তবে সেটাও অপশাল ।
৫ বছর হয়ে গেলে কিছু নিয়ম পরিবর্তন হবে
- রেজিষ্টার প্রাপ্ত কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে প্রত্যায়ন পত্র লাগবে।
- প্রথমেই লাগবে আপনার টিকাদানের কার্ড অথবা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র।
- বাসা বাড়ির টেক্স টোকেন বা কর পরিশোধের রশিদ
- প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রত্যয়ন পত্র লাগতে পারে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে।
- অভিভাবকের সচল মোবাইল নাম্বার
- পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন কার্ড ( যদি থাকে)
- পিতা মাতার ভোটার আইডি কার্ড ও লাগবে তবে সেটাও অপশাল ।
আবেদনের ঠিকানা
আমি প্রথমেই বলেছিলাম হতাশ হবার কারণ নেই । যেহেতু আপনি সব ডুকুমেন্ট রেডি করে নিয়ে বসেছেন। তবে আর দেরি কেনো। এখনি আবেদনে করে নিন । মনে রাখবেন যেখানে যা লিখার কথা বলা হয়েছে ঠিক সেখানে সেই তথ্য গুলো দেবেন। জন্ম তারিখ, ঠিকানা, লিঙ্গ, পিতার নাম, মাতার নাম, এই বিষয় গুলো খুব খেয়াল করে লিখবেন। প্রয়োজনে বারবার পড়ে লিখবেন।
যে সকল ধাপ আপনাকে অতিক্রম করতে হবে
ধাপ-১
মানে মনে করেন আব্দুল করিম এর নামে নিবন্ধন হবে। তখন আব্দুল করিম এর সকল তথ্য প্রদান করতে হবে। নাম,ঠিকানা, বয়স, লিঙ্গ মানে যা যা লাগে সব দিতে হবে। এটা শেষ হলে ধাপ-২
ধাপ-২
দ্বিতীয় ধাপে আপানাকে আব্দুল করিম এর পিতা মাতার তথ্য প্রধান করতে হবে। মানে তাদের নাম, ঠিকানা পেশা সহ যা যা লাগে সব তথ্য দিতে হবে। যদি কোনো একটি তথ্য কম হয় তবে আপনি পরবর্তী ধাপে যেতে পারবেন না।
ধাপ-৩
স্থায়ী অস্থায়ী ঠিকানা গুলো আপনাকে দিতে হবে। এখানেও একি অবস্থা যদি আপনি কোনো তথ্য ভূল দেন বা বাদ দেন তবে সমস্যায় পড়বেন। তাই খুবই শর্তকতার সহিত কাজ করতে হবে।
ধাপ-৪
আবেদনকারীর তথ্য গুলো আপনাকে এই ধাপে প্রদান করতে হবে। যদি আপনি নিজের আবেদন নিজিই করেন তবে সেখানে আপনার তথ্য গুলোই লাগবে।
ধাপ-৫
ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে আপনাকে । যেহেতু আপনি সকল তথ্য প্রদান করেছেন এবার প্রমাণ সরুপ কিছু ডকুমেন্ট আপনাকে সংযুক্ত করে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তথ্যগুলো যেনো আপানার দেয়া তথ্যের সাথে মিল থাকে।
ধাপ-৬
আবেদন প্রিন্ট । আপনার সকল কাজ শেষ এবার আবেদন প্রিন্ট করতে হবে। আর এর মাধ্যমে আপনার আবেদনের কাজ শেষ হবে। তাই সব শেষে আবেদন প্রিন্ট করে নিতে হবে।
আরো পড়ুন- ভোটার আইডি কার্ড এর আবেদন কিভাবে করবেন
জন্ম নিবন্ধন ফি কত
০-৪৫ দিনের যে কোনো শিশুর জন্ম নিবন্ধন ফ্রিতে করিয়ে নেয়া যায়। তবে ৪৬ দিন থেকে ৫ বছরের শিশুদের জন্য বিলম্ব ফি হিসেবে ২৫ টাকা প্রদান করতে হবে। আর যদি ৫ বছর এর পরে করেন তবে বিদেশের দুই ডলার মানে ৫০ টাকা দিতে হবে। ডলারের দাম বাড়লে টাকার পরিমাণ বাড়তে পারে। যদি জন্ম তারিখ বা কোনো ভূল সংশোধনের জন্য চান তবে আপনাকে ১০০ টাকা প্রদান করত হবে।
আবেদন বাতিল কররো কিভাবে
জন্ম নিবন্ধন আবেদন বাতিল করতে হলে প্রথমেই আপনাকে আবেদন আইডি জানাতে হবে। যদি আপনি সেটা না জানেন তবে অনেক কষ্ট সাধ্য হবে। বাতিলের জন্য যেখানে আবেদন করেছে সেখানে যান । অথবা ইউনিয়ন পৌরসভা যেটাই বলেন সেখানে গিয়ে আপনার আবেদন আইডি বলুন তবে তারা আপনার আবেদন বাতিল করে দিবে। যদি আবেদন নতুন হয় আরে আবেদন গৃহিত না হয়। তবে সে আবেদন ১৫ দিন পরে অটোমেটিক বাতিল হয়ে যাবে।
ইতি কথা
যদি এই আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসে তবে মন্তব্য কলামে জানাবেন। জানার কিছু থাকলে সোস্যাল মিডিয়া আমাদের প্রশ্ন করুন। আপনার কোনো পরামর্শ আমাদের শেয়ার করতে মেইল করুন।
জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন
জন্ম নিবন্ধন করতে কত টাকা লাগে
উত্তর:- টাকার পরিমান বা কত টাকা লাগে এই প্রশ্নে উত্তর আর্টিকেলে দেয়া আছে পড়ে নিতে পারেন।
নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদনে কি কি লাগে
উত্তরধ: নতুন বা পোড়াতন যাই বলেন সকল আবেদনে প্রায় একি ডকুমেন্ট লাগে। আরো জানতে চাইলো আর্টিকেল পড়ুন দেয়া আছে।
সন্তানের নিবন্ধন করতে পিতা মাতার কার্ড অনলাইন থাকতে হবে কি ?
উত্তর:- না । সন্তানের নিবন্ধন করতে হলো বর্তমানে পিতা মাতার কার্ড অনলাইন লাগবেনা। তবে কিছু দিন পূর্বে ছিলো । বর্তমানে ওয়েবসাইটের আপডেট অনুসারে আর পিতা মাতা নিবন্ধন কার্ড অনলাইন করা লাগেনা।
পিতা মাতার নিবন্ধন কার্ড না থাকলে কি সন্তানের কার্ড হবে
উত্তর:- হ্যা হবে। কারণ বর্তমান আপডেট অনুসারে পিতা মাতার কার্ড অনলাইনে না থাকলেও সন্তানের নিবন্ধন কার্ড করা যায়। সুতরাং পিতা মাতার কার্ড না থাকলে তাদের ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে জন্ম নিবন্ধন কার্ড তৈরি করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন কার্ড কি সংশোধন করায় যায় ?
উত্তর:- হ্যা। নির্ধারিত ফি প্রদান করে জন্ম নিবন্ধন কার্ড সংশোধন করা যায়। তবে সংশোধন করতে হলে আপনাকে ডকুমেন্ট দেখাতে হবে। নতুবা পারবেন না।