ভূমিকম্প কি, কেন হয় – পূর্ব প্রস্তুতি কি ভাবে নিতে হয়

বর্তমান সময়ে প্রতিফলিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর মধ্যে ভূমিকম্প এর সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। সাম্প্রতিক তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পটি ছিল একুশ শতকের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা। যেকোন সময় পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। তাই ভূমিকম্প কি, কেন হয় এবং এর পূর্ব প্রস্তুতি Earthquake preparedness, আজকের ভূমিকম্প সম্পর্কে জেনে নিন এখানে।

Earthquake – ভূমিকম্প

Earthquake বা ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূমিকম্প পৃথিবীর ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর মধ্যে একটি। ধ্বংসযজ্ঞ সংগঠনের পূর্বে এর পূর্বাভাস জানা যায় না। আদিকাল থেকেই পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে বড় বড় ভূমিকম্পের আবির্ভাব হয়েছে। তবে বর্তমানে ভূমিকম্পের পরিমাণ অধিকা হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ।

এটি একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। প্রতি ৩০ সেকেন্ডে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ভূমিকম্প সংগঠিত হচ্ছে। তবে অধিকাংশ সময়ই সেই ভূকম্পন টের পাওয়া যায় না। ভূমিকম্পের মাত্রা ৩ এর বেশি হলে টের পাওয়া যায়। তবে ৭ এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প একটি শহর এমনকি দেশকে ধ্বংসলীলায় পরিণত করতে পারে।

ভূমিকম্প কাকে বলে

পৃথিবীর অভ্যন্তরে শীলার ঘর্ষনের ফলে আকস্মিক নড়াচড়ার কারনে মৃদু বা তীব্র ভাবে ঘর্ষিত হয়ে শক্তির সঞ্চয় হয়। সেই শক্তি হঠাৎ মুক্ত হয়ে ভূ-পৃষ্ঠে ক্ষণিকের জন্য কম্পন সৃষ্টি করে। এতে ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। ভূমির এইরূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকেই ভূমিকম্প বলে।

কেন হয় ভূমিকম্প

একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ ভূমিকম্প এবং প্রাকৃতিক কারনেই ভূমিকম্প হয়। প্রকৃতির আসল রূপ জানা বড়ই কঠিন। তবে ১৯১২ সালে এক জার্মান বিজ্ঞানী আলফ্রেড ওয়েগনার পৃথিবীর মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করে ধারনা দেন যে, এক সময় পৃথিবীর মহাদেশগুলো একত্রে ছিলো। এবং তা ধীরে ধীরে একে অপরের থেকে দূরে সরে গেছে।

তিনি তার তত্ত্বে বলেন- পৃথিবীর উপরিতল কতগুলো শক্ত প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলোকে বর্তমানে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। পৃথিবীর একেকটি মহাদেশ একেকটি প্লেট। এই প্লেটগুলো পৃথিবীর ভূ-স্তরের পাথরের আবরন। যার নিচে রয়েছে পৃথিবীর মূল অংশের গলিত পদার্থ। পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সাধারনত এই প্লেটগুলোর উপরেই অবস্থিত।

তবে এই টেকটোনিক প্লেটগুলো একে অপরের সাথে পাশাপাশি মিলিত আছে। এবং একেকটি প্লেট অনেকগুলো সাবপ্লেট নিয়ে গঠিত। তাই এই প্লেটগুলোতে মাঝে মাঝেই একে অপরের সাথে হালকাভাবে বা স্বজুড়ে ধাক্কা লাগে। এতে মাটির নিচের তলদেশ কেপে উঠে।

যেই স্থানগুলোতে প্লেটগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয়েছে সেখানেই ঘর্ষনের আশঙ্কা বেশি ও ভূমিকম্প ও বেশি হয়। এছাড়াও মাটির নিচে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলেও ভূ-স্তরের মাটি কম্পিত হয়। এভাবেও ভূমিকম্প হয়ে থাকে। বর্তমানে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ উত্তোলনের ফলে মাটির নিচের পরিবেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি ভূমিকম্প হওয়ার অন্যতম কারন।

ভূমিকম্পের কারণ

পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ বিভিন্ন শীলার উপর অবস্থিত। সেই শীলাগুলো যখন তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে তখন পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরে শীলায় ঘর্ষন বা ধাক্কার ফলে শক্তি সঞ্চয় হয়। এই ঘর্ষনের মাত্রা বেশি হলে শক্তি নির্গত হয়। তার ফলে ভূ-ত্বক কম্পিত হয়।

প্রধান কারণগুলো হলো টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া, ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণ, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, তুষারপাত এবং মানব সৃষ্ট কারণ ইত্যাদি।

ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রের নাম কি

প্রাকৃতিক দূর্যোগ ভূমিকম্প মাপার আধুনিক যন্ত্রের নাম সিসমোমিটার (Seismometer)। এটি ভূত্বকের কম্পন পরিমাপক যন্ত্র হিসেবে ভূমিকম্পের মাত্রা ও তীব্রতা পরিমাপ করে। প্রধানত ভূমিকম্প পরিমাপের জন্য এই যন্ত্রের সাহায্যে, অগ্নু্ৎপাত বা অন্য যেকোন কারণে সংঘটিত ভূত্বকীয় বা ভূগর্ভস্থ কম্পনের তীব্রতা মাপা হয়।

সিসমোমিটার ভূকম্পন পরিমাপ করে সিসমোগ্রাম প্রকাশ করে। সিসমোগ্রাম হল ভূমিকম্পের তরঙ্গের একটি রেকর্ড। সিসমোগ্রাফে/সিসমোমিটারে ব্যবহৃত ভূকম্পন মাপার স্কেলের নাম রিখটার স্কেল। রিখটার স্কেল (Richter scale) যেকোন ভূমিকম্পের তীব্রতাকে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করে। এটি একটি ১০-ভিত্তির লগারিদমীয় পরিমাপ।

রিখটার স্কেলে ০-১০ পর্যন্ত সংখ্যা রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি একটি সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ভূমিকম্পের তীব্রতার যেই মাত্রা প্রকাশিত হয়, তা পূর্ববর্তী সংখ্যার চেয়ে ১০ গুণ বিধ্বংসী হয়। যেমন, ৪ মাত্রার ভূমিকম্পের চেয়ে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প ১০ গুন বেশি শক্তিশালী ও বিধ্বংসী।

ভূমিকম্প এর পূর্ব প্রস্তুতি

এমন একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ যার পূর্বাভাস জানা সম্ভব হয় না। এটি কখন, কোথায় ও কিভাবে হয় তার কোন স্পষ্ট নির্ধারক নেই। তবে পূর্বাভাস না জানলেও আমরা ভূমিকম্পের জন্য পূর্ব থেকে অর্থাৎ সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি। তাই এ বিষয়ে কিছু পূর্বজ্ঞান রাখা উচিত।

এ দূর্যোগের পূর্বে সতর্কতামূলক ভাবে আমাদের প্রস্তুতি গুলো হলো:

  • ভবন নির্মানকালে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মান করা। ভবনের উচ্চতা ও লোডের পরিমান অনুযায়ী বাড়ির ভীত মজবুত করা।
  • ভবন নির্মানের সময় পাশের ভবন থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা। কারন ভূমিকম্পে পাশের ভবনের দ্বারাও আপনার ক্ষতি হতে পারে।
  • নরম মাটিতে ভবন নির্মান না করা।
  • বাড়ির গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন নিরাপদভাবে স্থাপন করা।
  • ঘরের উপরের দিকে ভারী জিনিসপত্র না রাখা।
  • বাসভবনে পরিবারের সবার জন্য হেল্পমেট এর ব্যবস্থা রাখা।
  • এ সময়ে নিজে ও পরিবারের সকলের করনীয় সম্পর্কে আগেই সচেতনতা গড়ে তোলা।

ভূমিকম্পের সময় করণীয়

সাধারন্ত হয়ে থাকে ২৫-৪৫ সেকেন্ডের জন্য। কিন্তু এরই মাঝে এটি বিপর্যস্ত করে দিয়ে যায় সবকিছু। ভূমিকম্প হঠাৎ ও আকস্মিক ভাবে হওয়ায় ঐ মূহুর্তে মানসিক স্থিতি হারিয়ে ফেলেন অনেকেই। কি করবে তা বুঝে উঠাও কঠিন। ভূমি কম্পের সময় করণীয় কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

সাম্প্রতিক তুরস্ক-সিরিয়া ভূমিকম্প থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি। তবে ভূমিকম্প চলাকালীন সময় কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা ক্ষতির সম্ভাবনা কমাতে পারি-

  • সর্বপ্রথম নিজেকে শান্ত রাখা।
  • বাড়িতে থাকলে ভূমিকম্পের সময় বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা।
  • টেবিল, খাটের নিচ বা দেয়ালের কানিসের নিচে অবস্থান করা। এতে ভারী জিনিসপত্র বা ছাদ উপরে পড়া থেকে বাচার সম্ভাবনা থাকে।
  • বিছানায় থাকলে মাথার উপর বালিশ দিয়ে ঢেকে রাখা।
  • কাচের জিনিস ও ঝুলন্ত জিনিসপত্র থেকে দূরে থাকা।
  • লিফট ব্যবহার না করা।
  • কোন কোম্পানি বা গার্মেন্টসে অবস্থান করলে সকলে বেরিয়ে আসতে ধাক্কা ধাক্কি না করে নিরাপদ বস্তুর নিচে অবস্থান করা।
  • গাড়ি চালানোর সময় ভূমিকম্প হলে গাছপালা নেই এমন স্থানে স্থীর থাকা।
  • বহুতল দালানের ছাদ থেকে লাফানোর চেষ্টা না করা।
  • একতলা ছাদ হলে দ্রুত বাইড়ে বেড়িয়ে আসা।
  • গাছপালা, উঁচু দালান, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে অবস্থান করা।
  • পাহাড়ি এলাকায় উঁচু মাটি থেকে দূরে অবস্থান করা।

এরকম পরিস্থিতিতে নিজের ও পরিবারের সার্বিক রক্ষার চেষ্টা করতে হবে। তবে আতঙ্কিত হয়ে পড়লে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি।

ভূমিকম্প এর পরবর্তী করণীয়

আঘাত হানার পর ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিকম্প এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে হবে। একইসাথে, ব্যক্তিগত ও সামাজিক কিছু করণীয় হলো-

  • প্রথমেই বাড়িতে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসা।
  • সরকারি খবর ও নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা।
  • সরকারি ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ চালানো। নিজেও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করা।
  • বাড়ির বিদ্যুৎ, গ্যাস লাইনে সমস্যা চিহ্নিতকরন।

উক্ত নির্দেশনা গুলো মেনে চললে ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

ভূমিকম্প বাংলাদেশ

বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে ভূমিকম্প আঘাত হানার প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের ভূগর্ভে রয়েছে বার্মা সাবপ্লেট, ইউরোশিয়ান প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেট। এসব প্লেটের অবস্থান পরিবর্তনের কারনে প্রায় ৮ মাত্রা ভূমিকম্প হতে পারে।

বহুদিন ধরে এস্থানে তেমন বড় ভূমিকম্প হয়নি এবং সাবপ্লেট গুলো ধীরে ধীরে অবস্থান পরিবর্তন করছে। বিগত ৪০০ বছর ধরে, বিশেষ করে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে আছে সাবপ্লেট গুলো। ফলে সেখানে অনেক শক্তির সঞ্চয় হচ্ছে। যা ভূ-স্তরে প্রবল কম্পনের সৃষ্টি করতে পারে। ধারণা করা হয়, যখন এগুলো মুক্ত হবে তখন সৃষ্ট ভূমিকম্পের মাত্রা দাঁড়াবে প্রায় ৮.২ রিখটার থেকে ৯ রিখটার পর্যন্ত। এতে বাংলাদেশ সহ আশেপাশের দেশগুলো মিলে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে। তন্মধ্যে, বাংলাদেশের সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত Substraction Area তে ইন্ডিয়ান প্লেট ক্রমশ নিচের দিকে তলিয়ে যাচ্ছে এবং বার্মা প্লেট উপরে উঠে আসছে। এই কারনে বাংলাদেশে ভূমিকম্প আশঙ্কা সন্নিকটেই। এমনটি হলে সাম্প্রতিক তুরস্ক-সিরিয়া ভূমিকম্পের চেয়ে বেশি ভয়াবহ হতে পারে বাংলাদেশের অবস্থা। তাই ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বেই, এর করনীয় সম্পর্কে সকলেরই সচেতন থাকতে হবে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প

বর্তমানে বাংলাদেশ সহ আশেপাশের এলাকায় ভূমিকম্পের পরিমাণ বেড়েছে অনেক। ১৭৬২ সালে টেকনাফ থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে মে ফল্ট লাইন রয়েছে সেখানে ৮.৫ মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় ভূমিকম্প হিসেবে ধারণা করা হয়।

এছাড়া ১৮২২ ও ১৯১৮ সালে সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে ৭.৫ ও ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ২০০৭ সালের নভেম্বরে হয় ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্প।

ভূমিকম্প কেন হয় ইসলাম কি বলে

প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ মানুষের পাপকর্ম। পাপকর্মের মাধ্যমেই মানুষ কিয়ামতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)- বহুকাল পূর্বেই মানুষকে এই পাপ কাজ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন-

“যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে। কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্মসাত করা হবে। জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে। ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত বিদ্যা অর্জন করা হবে। একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নিবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে। মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল হবে। যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রূপে দেখা দিবে। সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো – রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (এসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির, পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য।” (তিরমিজি, হাদিস নং- ১৪৪৭)

আজ মানুষের পাপকর্ম বেড়েছে, তাই গত কয়েক দশকে ভূমিকম্পের মাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণ। মহান আল্লাহ তায়ালা নির্ধারিত পথে পরিচালিত হলে, তিনি আমাদের এই সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করবেন।

স্বপ্নে ভূমিকম্প দেখলে কি হয়

ভূমিকম্পের ব্যাপারে স্বপ্ন দেখার অর্থ হাদিস শরীফে সরাসরি ব্যাখ্যা করা হয়নি। তবে ভূমিকম্প ক্ষতি এবং দুরবস্থার সৃষ্টি করে। তাই এর থেকে আমরা সাধারণভাবে কিছু ধারণা নিতে পারি।

যেমন- কোন ধরনের ঝুঁকি বা বিপদের সাথে এ ধরনের স্বপ্ন সম্পর্কিত। একজন ব্যক্তি স্বপ্নে ভূমিকম্প দেখলে, কোন বিষয় সম্পর্কে তার উদ্বেগ, উত্তেজনা এবং বিভ্রান্তির অনুভূতি নির্দেশ করে। কিংবা কোন ব্যক্তির অসহায় বোধ প্রকাশ করে। স্বপ্নে ভূমিকম্প দেখলেই কোন বিপদ হবে এমনটি ভাবা যৌক্তিক নয়।

বরং স্বপ্নে ভূমিকম্প বা অন্যান্য বিপদ দেখলে, ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে – “আ’উযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্ব’নির রাজিম”, করে আল্লাহর কাছে বিপদ থেকে সাহায্য চাইতে হবে।

ভূমিকম্পের দোয়া

মুসলিমদের জন্য যেকোন বিপদে গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হলো দোয়া ইউনুস। সংকটাপন্ন অবস্থায় এই দোয়া পাঠ করা সুন্নত। এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর নবী হযরত ইউনুস (আঃ) বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। দোয়াটি হলো-

আরবি: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

বাংলা উচ্চারণ: “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুব্-হানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জ্ব-লিমিন।”

বাংলা অর্থ: “তুমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র সুমহান। আমি নিশ্চয়ই জালিমদের দলভুক্ত।

এই দোয়া এবং আল্লাহর তাজবীহ্ পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য পেতে পারেন।

আজকের ভূমিকম্প কোথায় হয়েছে | এইমাত্র ভূমিকম্প

প্রতিনিয়তই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ভূমিকম্প হচ্ছে। আজকেও বাংলাদেশ বা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভূমিকম্প হতে পারে। তবে ক্ষুদ্র মাত্রা ভূমিকম্প আমরা অনুভব করতে পারি না। বাংলাদেশ আজকের ভূমিকম্প কোথায় হয়েছে, এইমাত্র ভূমিকম্প, ভূমিকম্প নিউজ লাইভ, আজ কি ভূমিকম্প হয়েছে বাংলাদেশে – এসকল তথ্য জানতে পারবেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম, ও গুগল সার্চ ইঞ্জিন থেকে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প

পৃথিবীর বুকে রেকর্ড করা এখন অব্দি সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প ছিল ভালদিভিয়া ভূমিকম্প (Valdivia earthquake)। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৯.৪ থেকে ৯.৬। এই শক্তিশালী ভূমিকম্পটি ১৯৬০ সালে লাতিন আমেরিকার দেশ চিলির দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হেনেছিল।

এই ভূমিকম্পে চিলিতে মারা গিয়েছিল প্রায় ৪,৫০০ জন মানুষ। এবং আহত হয়েছিল প্রায় ২০ লাখেরও বেশি। ভূমিকম্পের ফলে সাগরে সুনামির সৃষ্টি হয়েছিল। সুনামিতে সৃষ্ট ঢেউয়ের কবলে পড়ে ফিলিপাইন ও জাপানে মারা গিয়েছিল আরো প্রায় ১৭০ জন।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ইতিহাস

শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে বাংলাদেশে ভূমিকম্প হয়েছে কয়েক শতকেরও বেশি। বাংলাদেশের ঢাকা, সিলেট এবং চট্টগ্রাম ১৫৪৮, ১৬৪২, ১৬৬৩, ১৭৬২, ১৭৬৫, ১৮১২, ১৮৬৫, ১৮৬৯ সালে বড় ভূমিকম্প হওয়ার ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: দলিল তল্লাশি করার নিয়ম

১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে ১০০ টিরও বেশি ভূমিকম্প। তন্মধ্যে ৬৫ টিরও বেশি সংঘটিত হয়েছে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের পরে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী- মে ২০০৭ থেকে জুলাই ২০০৮ পর্যন্ত প্রায় ৯০টি ভূ-কম্পন নথিভুক্ত হয়েছে। এসকল ভূমিকম্পের মাত্রা খুব বেশি না বাড়লেও ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ভূমিকম্প সংঘটনের হার বেড়েছে অনেক।

ভূমিকম্পের দেশ কোনটি

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয় জাপানে। তাই জাপানকে ভূমিকম্পের দেশ বলা হয়। জাপানের রিং অব ফায়ার অঞ্চল ৯০ শতাংশ ভূমিকম্পের কারণ। এশিয়ার জাপান, পলিনেশিয়ার টোঙ্গো, দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর রিং অব ফায়ার অঞ্চল অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। তাই এইসব অঞ্চলেই বেশি ভূমিকম্প হয়ে থাকে।

প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই রিং অব ফায়ার অঞ্চলে ৪৫২ টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। যা পৃথিবীর মোট আগ্নেয়গিরির ৭৫ শতাংশ।

ভূ-কম্পন বা ভূমিকম্পের ফলে জাপানের প্রায় ৭০% স্থান বসবাসের অযোগ্য। ২০১৪ সালে সুমাত্রার পশ্চিম উপকূলে সংগঠিত ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল। এবং এটি ইতিহাসের বৃহত্তম সুনামি তৈরি করেছিল। যার ফলে প্রায় ২ লক্ষেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।

ভূমিকম্প ছবি

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিধ্বংসী রূপ ধারণ করে ভূমিকম্প। ফলে নানারকম সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সকল ধ্বংসলীলার কিছু ছবি নিচে তুলে ধরা হলো:

প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর মধ্যে ভূমিকম্প ভূমিকম্পের পূর্ব প্রস্তুতি
ভূমিকম্প

শেষকথা

উপরোক্ত তথ্য থেকে আমরা এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারছি। এটি আঘাত হানলে রক্ষা পাওয়া কঠিন। তাই এই , ভূমিকম্পের সময় এবং ভূমিকম্প পরবর্তী করণীয়গুলো জেনে সতর্ক থাকুন। আজকে আপনি ভূমিকম্প কি কেন এই বিষয় জানতে পারলেন। পূর্ব প্রস্তুতি কি ভাবে নেবেন তা জেনে নেয়া ভালো।

Scroll to Top