দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ সহ জেনে নিন বিস্তারিত

দলিল রেজিস্ট্রেশন জমির ক্রয়ের ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।  জমি ক্রয়ের জন্য কতটাকা দাম  ঠিক করার পর পরই আসে জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচের কথা। কারণ বর্তমানে ভূমির রেজিস্ট্রেশন খরচের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক । যদি আপনি জমি ক্রয় করার পার রেজিস্ট্রেশন বা দলিলের জন্য চিন্তা করেন,তবে লিখাটি আপনার জন্য। শুরুতে থেকে শেষ পযন্ত পড়লে আপনি আর এ বিষয়ে ধোকা খাওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা।

জমির রেজিস্ট্রেশন করতে কত টাকা লাগে । কোন কোন বিষয় টাকা দিতে হয়। সেই বিষয়গুলো আমাদের জানা থাকা জরুরী। আমারা সাধারণ মানুষ যারা রয়েছি আমাদের এই বিষয়গুলো জানা না থাকার কারনে বিভিন্ন আইনজীবি বা দলিল লেখন ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রদান করে থাকেন।

আরো পড়ুন- পুরাতন দলিল বের করুন হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে

জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে কত টাকা খরছ হয়

জমির রেজিস্ট্রেশন বা রেজিস্টেশন করতে কত টাকা লাগে এই প্রশ্নে উত্তর জানতে হলে আপনাকে পুরো বিষয় জানতে হবে। কারণ এলাকা ভেদে এই ফি কম বেশি হয়ে থাকে। তাই আপনাকে বিস্তারিত জানা জরুরী। তো চলুন জেনে নেয়া যাক।

নিচে সরকারের যে সকল খাতে টাকা জমা দিতে হয় ধারাবাহিক ভাবে দেয়া হলো।

  • স্ট্যাম্প শুল্ক ফি
  • রেজিস্ট্রেশন ফি
  • স্থানীয় সরকারের কর
  • উৎসে আয়কর [ আয়কর আইন 2023 ধারা 125]
  • উৎসে আয়কর [ আয়কর আইন 2023 ধারা 126]
  • মূল্য সংযোজন কর [ VAT ]
  • বিবিধ ফি
  • কোর্ট ফি
  • জেনে রাখা ভালো আমাদের দেশের সকল দলিল রেজিস্ট্রেশন এর ফি সমান নয়। এলাকা বা মৌজা অনুসারে ফি এর হার নির্ধারণ করা হয়। নিচে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

স্ট্যাম্প শুল্ক ফি

হস্তান্তরকৃত ভূমির দলিলে লিখতি মোটা টাকা বা মূল্যের ১.৫% টাকা। এই  দলিলে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকার এর নন জুডিসিয়াল স্টাম্প ব্যবহার করা যাবে। বাকি টাকা পে অর্ডারের মাধ্যমে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর ১১৬২১০২ নং কোডে জমা করতে হবে দলিল রেজিস্ট্রেশন এর জন্য

রেজিস্ট্রেশন ফি

হস্তান্তরকৃত ভূমির দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ১% টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি। ২৪,০০০ টাকা বা কম দলিলের মূল্য হলে টাকাটা নগর স্থানীয় রেজিস্ট্রেশন অফিসে জমা দিতে হবে। যদি এ বেশি হয় তবে পে অর্ডার করতে হবে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক এর ১৪২২২০১ এই কোডে (সাবেক কোড ১৮২৬)।

স্থানীয় সরকার কর

দলিলে লিখিত মূল্যের ৩% টাকা স্থানীয় সরকার কর। তবে কোন সিটি কর্পোরেশন বা ক্যান্টনর্মেন্ট বোর্ড (উপজেলাধীন নয়) এর অধিনস্ত হলে হস্তান্তরকৃত সম্পত্তির লিখিত মূল্যের ১%। জমা দেয়ার নিয়ম পে অর্ডর স্থানীয় সোনালী ব্যাংক এর মাধ্যম।

উৎসে আয়কর [ আয়কর আইন 2023 ধারা 125]

রাজধানী উন্নয়নকর এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ব্যতীত, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ সহ সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এর আওতায় লিখিত মোট টাকার ৬% টাকা উৎসে কর  আয়কর আইন ২০২৩ ধারা ১২৫ অনুযায়ী দিতে হবে দলিল রেজিস্ট্রেশন এর জন্য।

এছাড়া অন্য যে কোন পৌর এলকার আওতায় ভূমি হলে লিখিত মূল্যের ৪% উৎসে কর দিতে হবে। অন্যান্য এলাকার আওতায় ২% হারে কর দিতে হবে।

উৎসে আয়কর [ আয়কর আইন 2023 ধারা 126

(ক) ল্যান্ড ডেভেলপার কোম্পানির দ্বার ভূমি বা প্লট বিক্রয় বা হস্তান্তর এর ক্ষেত্রে :-

ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর নারায়নগঞ্জ মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী জেলার অধীনস্থ ভূমির জন্য দলিলে লিখিত মোট মূল্যেল ৫% টাকা উৎসে আয়কর [ আয়কর আইন 2023 ধারা 126] অনুযায়ী দিতে হবে।

(খ)ডেভেলপার কোম্পানি কর্তৃক ভবন বা প্লট ক্রয় বিক্রয় এর ক্ষেত্রে:-

রাজধানী ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অধিনস্থ গুলশান,বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা আবাসিক এলাকায় আবাসিক ১৬০০/- টাকা প্রতি বর্গমিটার  বানিজ্যিক ৬৫০০/- প্রতি বর্গমিটার।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে অবস্থিত গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল এবং দিলকুশা বানিজ্যিক এলাকার আওতায়= আবাসিক ১৬০০/-টাকা প্রতি বর্গমিটার এবং বানিজ্যিক ৬৫০০/-টাকা প্রতি বর্গমিটার।

রাজধানী ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আবাসিক এলাকা ডি.ও.এইচ.এস, মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা ক্যান্টনমেন্ট ও কাওরান বাজারের আওতায় আবাসিক ১৫০০/-টাকা ও বানিজ্যিক ৫০০০/-টাকা প্রতি বর্গমিটার। 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে এলাকায় পাচলাইশ ও খুলশি আবাসিক এলাকা, নাসিরাবাদ এবং আগ্রাবাদ এলাকার আওতায় = আবাসিক ১৫০০/-টাকা ও বানিজ্যিক ৫০০০/-টাকা প্রতি বর্গমিটার।

দলিল নিয়ে আরো জানুন

 ঢাকা উত্তর ও দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপরোক্ত এলাকা ছাড়া বাকী এলাকার আওয়াতায় আবাসিক ১০০০/-টাকা ও বানিজ্যিক ৩৫০০/-টাকা প্রতি বর্গমিটার।

রাজধানীর  উত্তর ও দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকা ছাড়া  অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের আওয়াতায় আবাসিক ৭০০/-টাকা ও বানিজ্যিক ২৫০০/-টাকা প্রতি বর্গমিটার।

কর্পোরেশন এলাকা ব্যতীত  অন্যান্য এলাকার আওতায়  আবাসিক ৩০০/-টাকা এবং বানিজ্যিক ১২০০/-টাকা  বর্গমিটার। বলে রাখা ভালো যে, আবাসিক ফ্লাটের আয়াতন ৬০ বর্গমিটার এর মধ্য হলে ৪০% এবং ৬০ বর্গমিটার এর চেয়ে বেশি কিন্তু ৭০ বর্গমিটারের মধ্যে হলে ২০% কম হবে।

ই ফি

জমি রেজিস্টেশন বা রেজিস্ট্রি করা সময় ১০০ টাকা ই ফি প্রদানক করতে হয় । অন্যতায় আপনি রেজিস্ট্রি করতে পারবেন না। দলিল রেজিস্ট্রেশন এর জন্য ই ফি দিতে হবে।

এন ফি

দলিলের প্রতি তিন শত শব্দ অনুযায়ী এন ফি প্রদান করত হয়। ৩০০ শব্দ বা তাহার অংশ বিশেষ এর জন্য ২৪ টাকা এন ফি দিতে হবে। এবার প্রশ্ন হলো এন ফি জিনিস টা কি, এন ফি হলো দলিলেল নকল নিবেশগনের সম্মানি।

কোর্ট ফি

এল টি নোটিশের আবেদনের জন্য ১০ টাকা কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে। অন্যতায় আপনার আবেদন গ্রহণ যোগ্য হবে না। আর এই কোর্ট ফি এর টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হয়ে থাকে।

শেষকথা

পরিশেষে বলা যায় যে জমির দলিল রেজিস্টেশন এর জন্য প্রতি নিয়ত আপডেট হচ্ছে। তাই আপনাকে এ বিষয়ে অনলাইন থেকে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে বিস্তারিত কোন উকিল বা মোহরির কাছে থেকে জানতে হবে। আশাকরি আজকের এই আর্টিক্যালের মাধ্যমে কিছুটা হলেও আপনি উপকৃত হবেন। আরো জানতে আমাদের সোসাল মিডিয়ায় এড হতে পারেন। এবং আপনার প্রশ্ন আমাদের জানাতে পারেন। আমরা আপনার প্রশ্নে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন দেখা হবে আরো কোনো নতুন বিষয় নিয়ে।

Scroll to Top